শটিফুল: হারিয়ে যাচ্ছে যে সুন্দর ফুলটি

 


বাংলাদেশের আনাচে কানাচে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা একটি উদ্ভিদ শটি। মূলত মোহনীয় রূপের ফুল আর ভেষজ গুণের জন্য প্রসিদ্ধ শটিগাছ। অঞ্চলভেদে এর অনেক নাম রয়েছে- শটি, হডি, বনহলুদ, ঘিকমা ও ফইল্লা। ইংরেজি নাম - Aromatic turmeric আর বৈজ্ঞানিকভাবে Curcuma aromatica নামে ডাকা হয় শটিগাছকে।

বহুবর্ষজীবী গুল্ম ও কন্দ জাতীয় এই উদ্ভিদটি দেখতে প্রায় হলুদ গাছের মতো। পার্থক্য বলতে হলুদের কন্দমূল হলুদ আর শটির সাদা। বেশ কষ্টসহিষ্ণু এই গাছ প্রায় সব ধরনের মাটিতে জন্মায়। তবে সাধারণত যেখানে বন্যার পানি ওঠেনা এবং ফসলের চাষ হয় না সেখানে শটি ভালো হয়। একবার চারা জন্মালে কিছুদিনের মধ্যেই সেখানে এর বংশবিস্তার ঘটে।  

শটিগাছের পাতা আকারে বড় এবং গাঢ় সবুজ রঙের। উচ্চতা ৩ থেকে ৪ ফুট। পাতার অগ্রভাগ সূচালো, মধ্যশিরা স্পষ্ট। বড় মঞ্জরিদণ্ডে সুবিন্যস্তভাবে পাপড়ি সাজিয়ে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ফুটে থাকে শটিফুল। মঞ্জরিদণ্ড দৈর্ঘ্যে প্রায় ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি লম্বা হয়। ফুলের রঙ লাল, গোলাপি-লাল, বেগুনি ও হলুদাভ।

এই গাছের সবচেয়ে উপকারী অংশ হলো এর কন্দ। মাটির নিচে কয়েক মাস সুপ্ত অবস্থায় থাকে কন্দ। দেখে বঝার উপায় থাকে না এখানে শটি গাছের বাগান ছিল। বসন্তের শেষে নতুন বৃষ্টি পড়লেই শটিফুল মাটি ফুঁড়ে বের হয়। কন্দ থেকে আগে ফুল হয় এবং ফুল ঝরে গেলে ধীরে ধীরে পাতা গজায়। শটিগাছের কন্দে সিনিওল সেসকুইটারপিন নামক উপাদান থাকায় এ থেকে তৈরি বার্লি ডায়রিয়া ও জ্বর নিবারণে কাজ করে। পেট ফাঁপা, প্রদাহ, ব্যথা, নানান চর্ম রোগসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা সারাতে উপকারী শটিগাছ। খাবার হিসেবেও এটি বেশ পুষ্টিকর। শটি কন্দ থেকে আবির তৈরি হয়। 

 

নির্বিচারে বন ধ্বংসের ফলে শটিগাছ আর আগের মতো চোখে পড়ে না। এমন অবস্থা চলতে থাকলে একসময় প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাবে আরেকটি উদ্ভিদ। উপকারী এই উদ্ভিদটি রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। পলিথিনের বিকল্প হিসেবে শটিগাছের পাতা ব্যবহার শুরু করা গেলে প্রকৃতিও কিছুটা রক্ষা পাবে দূষণের হাত থেকে। এজন্য প্রয়োজন যথাযথ কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ।
Previous Post Next Post